সুরভী ও অধরা ইসলাম, চরফ্যাশনঃ আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ভোলার চরফ্যাসন উপজেলায় এক এক করে বসতে শুরু করেছে কোরবানির জন্য প্রস্তুতকৃত ২৭ টি পশুর হাট। এরই মধ্যে ওসকল হাটগুলোতে উঠতে শুরু করেছে বড ছোট মাঝারি বিভিন্ন আকৃতির গরু, ছাগল, ভেড়া সহ নানান জাতের কোরবানির পশু। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি পশু উড়তে দেখা গেছে উপজেলার অন্যতম পশুর হাট চরফ্যাশন সদর পশুর হাটে।
এদিকে পশুর হাট ঘিরে নিরাপত্তাব্যবস্থা, নির্বিঘ্নে যাতায়াত, জালনোট শনাক্তকরণ মেশিনসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট হাট কর্তৃপক্ষ।
যদিও কোরবানীর ঈদের বাকি এখনো প্রায় দুই সপ্তাহের কম সময় রয়েছে। সে তুলনায় হাটগুলোতে পশু কেনাবেচা কিংবা কোন হাটের তেমন জমজমাট হয়ে ওঠেনি। অথচ গেল বছর গুলোতে আরো আগ থেকেই উপজেলার প্রতিটি হাটই জমজমাট ছিলো কোরবানীর পশু বেচা বিক্রিতে। কিন্তু এবছর কোরবানীর পশু বেচা-কেনা অনেকাংশে কমই লক্ষ্য করা গেছে। এক কথায় ক্রেতার সমাগম নেই বললেই চলে।
শনিবার (১৭ জুন) চরফ্যাসন পশুর হাট ঘুরে দেখা যায় রাস্তার পাশে সারি সারি বাঁশের খুঁটি বসিয়ে গরু বাঁধার স্থান তৈরি করা হয়েছে। এক এক করে বিক্রেতারা তাদের পালিত পশু নিয়ে আসতে শুরু করছেন হাটগুলোতে। যদিও প্রতিবছরই ঈদের দুই-তিনদিন আগে থেকেই কোরবানির পশুর হাট পুরোদমে জমজমাট হয়। এর আগে ভিড় থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা কিছুটা কমই থাকে।
হাটে আসা কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবছর কোরবানীর পশু দাম তুলনামূলক অনেক বেশি। হয়তোবা শেষের দিকে এই দাম অনেকাংশে কমে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। তাই যারাই হাটে এসেছেন তাদের অধিকাংশই পশুর দাম দেখতে দেখতেই হাটে ঘুরেফিরে সময় কাটিয়েছেন।
হাটে আসা শাহবুদ্দিন নামে এক ক্রেতার সাথে কথা হলে তিনি জানান, দেশের নিত্যপণ্য সহ প্রতিটি জিনিসের দামই অনেকাংশে বেশি। সে তুলনায় এবার গরুর দাম কয়েকগুন বেশি হবে এমনটাই ভেবে চিন্তিত রয়েছেন অধিকাংশ ক্রেতারা। অপর ক্রেতা লোকমান হাওলাদার বলেন, প্রতিবছরই দেশীয় গরুর দাম তুলনামূলক বেশি থাকে। ভোলা জেলা দেশের অন্যান্য জেলার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সীমান্ত অঞ্চল কিংবা বাইরের অন্যান্য জেলা থেকে এ অঞ্চলে কোরবানির পশু আসতে অনেকটা বিরম্বনার কারণে এই জেলায় তেমন বাইরের গরু দেখা যায় না। সংগত কারণেই এখানে দেশীয় গরুর মূল্য অনেকাংশে বেশিই থাকে।
তবে দ্রব্যমূল্যের পাশাপাশি গো-খাদ্যের চওড়া মূল্যের কারণে গেলো বছরের তুলনায় বর্তমানে কয়েকগুন বেশি দামে কোরবানির পশু বিক্রি করতে হবে এমনটিই জানালেন হাটে পশু নিয়ে আসা বিক্রেতাগন।
হাটে চারটি গরু বিক্রি করতে নিয়ে আসা জামাল উদ্দিন নামে এক খামারি বলেন, খৈল, ভুষি, ভুট্টাসহ প্রতিটি গো-খাদ্যের মূল্য বিগত বছরের তুলনায় অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই চড়ামূল্যে এই সকল খাদ্য কিনে দেশীয় পদ্ধতিতে গবাদি পশু লালন পালন করে চওড়া মূল্যেই আমাদেরকে বিক্রি করতে হবে। তা নাহলে পশু বিক্রিতে লাভতো দূরের কথা চালান নিয়েই ঘরে আসা দায় হয়ে পড়বে।
শওকত হোসেন নামে অপর খামারি বলেন, এখনো তেমন বেচা কেনা বাড়েনি, ভালো দামের আশায় আমাদেরকে বিভিন্ন হাটে পশু নিয়ে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। পশু লালন-পালনে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে তাতে করে বিক্রি করে কিছুটা মুনাফার আশায় রয়েছেন মালিকরা অধিকাংশ খামারিদের পাশাপাশি হাটে পশু নিয়ে আসা বিক্রেতারা।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রানী সম্পদ ভেটেরিনারী হাসপাতালে মেডিক্যাল টিম এ দায়িত্ব থাকা মোঃ ইব্রাহিম জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ৬টি মেডিক্যাল টিম কোরবানীর পশু হাটে নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে। হাটে আসা পশু স্টোরেয়েড দিয়ে মোটাতাজা করণ পশু, অসুস্থ পশু চিহ্নিত করাসহ প্রচন্ড গরমে হীটস্টোক ঝুকিতে থাকা পশুকে তাৎক্ষনিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া চরফ্যাসনে চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত গরু রয়েছে বলেও জানান তিনি।
You cannot copy content of this page