অনলাইন ডেস্ক-
ভয়াবহ দাবদাহের মধ্যে বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিংয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন সারা দেশের মানুষ। শহরে চেয়ে গ্রামের অবস্থা আরও নাজুক।
দেশের প্রায় সব গ্রামে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) দিনে চাহিদার তুলনায় ৪০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চাহিদার অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে লোডশেডিং পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
ভয়াবহ দাবদাহের মধ্যে বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিংয়ে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন সারা দেশের মানুষ। শহরে চেয়ে গ্রামের অবস্থা আরও নাজুক।
দেশের প্রায় সব গ্রামে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) দিনে চাহিদার তুলনায় ৪০ শতাংশ কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে। অনেক এলাকায় কারণে রাজধানীজুড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানির ঘাটতি প্রায় ১২০ কোটি লিটার। এই অবস্থায় জোড়াতালি দিয়ে চলছে ওয়াসার কার্যক্রম।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বুধবার ঢাকার বাইরে ৯ হাজার ৫৬৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে তারা পেয়েছে ৬ হাজার ৭৯৮ মেগাওয়াট। আর আগের দিন মঙ্গলবার ৯ হাজার ৪১৭ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৬ হাজার ৭১৪ মেগাওয়াট। এ
কারণে ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুমিল্লা ও রাজশাহী অঞ্চলের গ্রাম এলাকায় ১২ ঘণ্টা লোডশেডিংয়েরও খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট, বরিশালের গ্রামগুলোয় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা। বৃহস্পতিবার সারা দেশে আরইবি সর্বোচ্চ লোডশেডিং করেছে ২ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট।
গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৪৭০ মেগাওয়াট। তার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ মেগাওয়াট। গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর উপমহাব্যবস্থাপক (টেকনিক্যাল) জাহিদুল ইসলাম বলেন, সোমবার দুপুর পর্যন্ত ৩৯ শতাংশ লোডশেডিং হয়েছে।
দিনাজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ জানায়, ১১০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ মেগাওয়াট। খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, সরবরাহে ৩০ শতাংশ ঘাটতি থাকছে। মাঝেমধ্যে আরও বেড়ে যায়। ওজোপাডিকোর নির্বাহী পরিচালক (পরিচালন) মোহা. শামছুল আলম জানান, বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা শহর ও ২০টি উপজেলা শহর এলাকায় ঘাটতি ছিল ১৫৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
রাজশাহীতে একদিকে ভয়াবহ লোডশেডিং, অন্যদিকে অব্যাহত দাবদাহ। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার নওপাড়া গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, রাত-দিনে মিলে ১২ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না। একবার গেলে ২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং থাকছে। রাতে ঘুমাতে কষ্ট হচ্ছে।
খুলনার গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং অসহনীয় হয়ে উঠেছে। দিন-রাত মিলিয়ে কোথাও কোথাও ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা, আবার কোথাও ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। শহরে কিছুটা কম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ৮ বার বিদ্যুৎ গেছে।
দিনাজপুরে গত এক সপ্তাহে ৪০-৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে উঠানামা করছে তাপমাত্রা। জেলার সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের বাসিন্দা হেমায়েত উদ্দিন বলেন, দিন-রাতে কম করে ১০ থেকে ১২ বার বিদ্যুৎ যায়। একবার গেলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে আসে। প্রায় একই অভিজ্ঞতা বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলা গৃহিণী নয়ন বানু। তিনি বলেন, গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে লোডশেডিং।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে হাসপাতালে রোগীদের খুবই খারাপ অবস্থা। অস্ত্রোপচারের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। লক্ষ্মীপুরে চলমান লোডশেডিংয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। গ্রাহকদের দাবি, ১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলে লোডশেডিং থাকে দেড় ঘণ্টারও বেশি। এতে গরমে হাসপাতালে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
সরকারিভাবে ৩ দিন প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রমে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকছে। লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় রায়পুর উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কার্যালয়ে হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে থানায় জিডি হয়েছে।
এ ঘটনায় মৌখিকভাবে উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম সাহাদাত হোসেন রায়পুর থানা পুলিশকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বলেছেন। বুধবার বিকালে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিপন বড়ুয়া গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সন্ধ্যায় সদর হাসপাতালে গেলে শিশু ওয়ার্ডের সামনে মেঝেতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে দেখা যায় স্বজনদের। গরমে অসহ্য যন্ত্রণায় রয়েছেন বলে জানান রোগী ও তাদের স্বজনরা।
লক্ষ্মীপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানায়, তাদের অধীনে প্রায় ৩৮ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। তারা সবাই লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাসিন্দা। পিকআওয়ারে ১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। কিন্তু সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ৯ মেগাওয়াট। এতে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করেছে। লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষ জানায়, জেলা সদর, রায়পুর, রামগতি, কমলনগর ও রামগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের আওতায় তাদের প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ গ্রাহক রয়েছেন। বিদ্যুৎ না থাকায় চরম কষ্ট ভোগ করছেন এসব গ্রাহক।
রাজধানী ঢাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)। এ দুই সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার বেশিরভাগ এলাকায় দিনে অন্তত ৪ বার করে লোডশেডিং হয়েছে। দুটি সংস্থা মিলে ঘণ্টায় লোডশেডিং করেছে ৬০০ মেগাওয়াটের।
You cannot copy content of this page