স্টাফ রিপোর্টারঃ ভোলায় প্রতিটি ফলের দোকানেই চলছে ভালো ফলের সাথে মিশিয়ে পচা ফল বিক্রির হিড়িক। এই নিয়ে প্রতিনিয়ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে চলছে বাকবিতণ্ডা। প্রশাসনের পাশাপাশি ভোক্তা অধিকারের পক্ষ থেকে যথাযথ মনিটরিং না থাকায় রীতিমতো ফলের বাজার গুলোতে ফরমালিন যুক্ত ও পচা ফলের সয়লাব ঘটছে।
ভোলার সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা যায় প্রতিটি ফলের দোকানেই ভালো ফলের ফাঁকে ফাঁকেই সাজিয়ে রাখা হয়েছে বাতিলকৃত পচা ও গন্ধযুক্ত আম, আপেল, কমলা সহ বিভিন্ন ধরনের ফল। যে কোনো ক্রেতা ফল কিনতে আসলেই দেখা যায় বিক্রেতা নিজের হাতেই তার দোকানে সাজিয়ে রাখা ফলের মধ্য থেকে এক এক করে ফল ব্যাগের মধ্যে রাখছেন। এরপর ওজন মাপার মিটারে ফলের পরিমাপ করে ধরিয়ে দেয় ক্রেতার হাতে। যদিও কোন ক্রেতা ওই ফলের মধ্যে ভালো-মন্দ যাচাই করতে যায়, তাহলেই দেখা যায় অর্ধেকের মতোই ফল থাকে পচা ও গন্ধযুক্ত।
এমনই এক চিত্র চোখে পড়েছে ভোলা শহরের নতুন বাজার কৃষ্ণা বাবুর ফলের দোকানে। ক্রেতার হাতে পচা ফল ধরিয়ে দেওয়ার পরও ওই ক্রেতা প্রতিবাদ করলে উল্টো তাকে হুমকি-ধামকি ।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) রাতে ৬০ টাকা কেজি দরে ১০ কেজি রুপালি আম কিনে নিয়ে যান এক ক্রেতা। বাড়িতে গিয়ে দেখে ১০ কেজি আমের মধ্যে প্রায় ৩ কেজি আমই পঁচা। পরদিন সকালে ওই আম ব্যবসায়ী কৃষ্ণা বাবুকে পঁচা আমের বিষয়ে জানাতে গেলে উল্টো ওই ক্রেতাকে হুমকি ধামকি।
বিষয়টি নিয়ে দুঃখ হতাশাগ্রস্থ হয়ে ওই ক্রেতা জানান, আমরা তো সরল বিশ্বাসে বিক্রেতাদের কাছ থেকে পয়সার বিনিময়ে তাদের পণ্য কিনে নেই। হয়তো কেনার সময় ভালো-মন্দ সম্পূর্ণ রূপে আমাদের দেখার সুযোগ হয় না। তাই বলে কি তারা আমাদেরকে পচা গন্ধযুক্ত ফল গোপনে প্যাকেট করে দিয়ে দিবে? পাশে থাকা জাহাঙ্গীর নামের আরেক ক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহে বাজার থেকে আমিও ৭ কেজি আম নিয়েছি। দোকানদার নিজের মন মতোই আম বেচে প্যাকেট করে সুন্দর মতো আমাকে ম্যাপে দিয়েছেন। আমিও ভালো-মন্দ না দেখেই আম নিয়ে বাড়িতে চলে আসছি। কিন্তু বাড়িতে আম খুলতেই উপরের তিনটা পচা আম দেখতে পেলাম, এরপর সম্পূর্ণ প্যাকেট থেকে আম ঢেলে দেখা যায় ৭ কেজি আমের মধ্যে ৮টা আমি একেবারেই পচা ও খাওয়ার পুরোপুরি অনুপযোগী। এ ধরনের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে বাজারগুলোতে ফল বিক্রেতাদের প্রতি ক্রেতাদের।
এ বিষয়ে প্রথমত ফল বিক্রেতা কৃষ্ণা বাবুর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমরা আড়দ থেকে ঝুড়ি ভর্তি আম কিনে আনার পর সেখানে কিছু আম আংশিক নষ্ট থাকে। কিন্তু আমরাই বা কি করবো, আমরা তো পয়সা দিয়ে এগুলো কিনে আনি। তাই হয়তোবা কিছু আম সাজানো অবস্থায়ই ক্রেতাদেরকে দিতে গিয়ে তাদের বেগে চলে যায়। একই কথা বলেন আরো কয়েকজন ফল বিক্রেতা। তারাও জানান, পচা আমগুলো ফেলে দিলে হয়তোবা তাদের লাভের পরিমাণ কিছুটা কমে যায়। কিন্তু একেবারেই যে লোকসানে পড়তে হয় তাদেরকে এমনও কিন্তু নয়।
এদিকে গেলো আমের মৌসুমে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পচা বাসী ফরমালিনযুক্ত আম বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অর্থদণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও এ বছর কিন্তু এইসব ক্ষেত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোন অভিযান নেই বলেই জানান ভোলার বাজারের অন্যসব ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, ফরমালিন যুক্ত ফলের বিরুদ্ধে পুরোপুরি অভিযান না করলেও পচা গলা যেসকল ফল বাজারের ফল ব্যবসায়ীদের কাছে রয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত থাকলে তাহলে হয়তোবা ক্রেতারা নিঃসন্দেহে বাজারগুলো থেকে ভালো ফল ক্রয় করতে পারবে।
ভেজাল খাদ্য সহ বাজারে নিত্যপণ্য জিনিসপত্রের অসদুপায় মূল্য সহ বিভিন্ন অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এমনটি দাবি করে ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী বলেন, যদিও প্রতিনিয়ত আমাদের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা পরিচালিত হয় বিভিন্ন বিষয়ে অভিযান। আমরা আশা করছি এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখে এর বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
You cannot copy content of this page