ভোলা প্রেসক্লাবের প্রহসনের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিকগণ
ভোলা প্রতিদিন রিপোর্ট ॥
ভোলা প্রেসক্লাবের আজকের প্রহসনের নির্বাচন থেকে সরে গেলেন ভোলার সিনিয়র সাংবাদিকগণ। তারা হলেন সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী আহাদ চৌধুরী তুহিন, সহ-সভাপতি প্রার্থী শাহাদাত হোসেন শাহীন, বর্তমান স্ব-ঘোষিত কমিটির সদস্য মোকাম্মেল হক মিলন, মেজবাহ উদ্দিন শিপু, মনিরুল ইসলাম।
আজ শুক্রবার (৩০শে ডিসেম্বর) তাদের নিজ নিজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাক্তিগত (ফেসবুক-আইডি) তে স্ট্যাটাস দিয়ে ভোলা প্রেসক্লাব নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে জানান।
সাংবাদিক আহাদ চৌধুরী তুহিন বলেন, আপনাদের অনুরোধে ও সমর্থনে আমি ভোলা প্রেসক্লাব নির্বাচনে সাধারন সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলাম। মনোনয়ন পত্র ক্রয়ের পর দেখলাম ভোটার তালিকায় দু’জন সরকারি চাকুরীজীবী ও কয়েকজন অসাংবাদিকের নাম অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে ভোলায় সফলতার সাথে কাজ করা অনেক সাংবাদিকের নাম ভোটার তালিকায় নেই। তারপর ও ভেবেছিলাম নির্বাচিত হলে ভোলা প্রেসক্লাবকে প্রকৃত সাংবাদিকদের সংগঠনে পরিনত করব। কিন্তু এরই মধ্যে সাংবাদিকদের একটি অংশ প্রেসক্লাবের নতুন একটি কমিটি ঘোষণা করেছে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ ক্লাব একটি আর কমিটি দুইটি, যা হাস্যকর এবং সাংবাদিকদের জন্য লজ্জা ও বিব্রতকর। তিনি বলেন, বর্তমানে দ্বীপজেলা ভোলার ঐতিহ্যবাহী ভোলা প্রেসক্লাব তার ঐতিহ্য হারিয়ে খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা গ্রুপিং এখন দ্বন্দ্ব সংঘাতে রূপ নিয়েছে। হাতে গোন ২/৩ জন ব্যক্তির সীমাহীন লোভ এবং নির্লজ্জতা এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজে আলো ছড়াতে বাতিঘর হিসেবে কাজ করবে যে প্রেসক্লাব সে আজ নিজেই ঘোর অন্ধকারে। এ অবস্থার অবসানকল্পে প্রকৃত সাংবাদিকদের সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকৃত ও পেশাদার সাংবাদিকদের অনুরোধে এ বছরের নির্বাচনে আমি সাধারন সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছিলাম। যে কমিটির ১১টি পদের ইতোমধ্যে সভাপতি হাবিবুর রহমান সহ ৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। শুধুমাত্র সহ-সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, একই সংগঠনের আরো একটি কমিটি (অনু-মিঠু) ইতিমধ্যেই নির্বাচিত হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে এসেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ ভোলা প্রেসক্লাবে সুধী সমাজ ও গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য কোন নির্বাচন হচ্ছে না। দুই বছরের মেয়াদ শেষ হলেই নির্বাচনের নামে প্রহসন করে সুকৌশলে কমিটির মেয়াদ নবায়ন করা হয় মাত্র ! এ বছরও এর ব্যতিক্রম নয়, সাধারণ সম্পাদক পদে আমি ও সহ-সভাপতি পদে শাহাদাত শাহিন অনাকাঙ্খিতভাবে প্রার্থী হওয়ায় তাদের সেই প্রক্রিয়াটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। একটি ক্লাবের দু’টি কমিটি হওয়ায় নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব সংঘাত ক্লাবের চার দেয়াল ছাপিয়ে রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে পড়েছে, যা খুবই লজ্জাকর। নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ২৬ শে ডিসেম্বর’২২ বৈশাখী টেলিভিশনের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান পন্ড হয়েছে। সেদিন একটি পক্ষ ক্লাবে তালা মেরে রাখায় ভোলার সিনিয়র জুনিয়র সাংবাদিকরা প্রেসক্লাবে প্রবেশ করতে পারেনি। যে প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশ অধিকার নেই এই ক্লাবের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোন অর্থ হয় না। তাই ভোলার সকল সাংবাদিকদের অংশগ্রহনে ঐক্যবদ্ধ প্রেসক্লাবে স্বচ্ছ নতুন নির্বাচনের দাবীতে ৩১ ডিসেম্ভর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন থেকে আমি সরে দাঁড়ালাম। আমাকে অনুগ্রহ করে কেউ ভুল বুঝবেন না। সকলের ভালবাসা ও দোয়া প্রার্থী।
অন্যদিকে, সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন শাহীন বলেন, দ্বীপজেলা ভোলার ঐতিহ্যবাহী ভোলা প্রেসক্লাব আজ তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা গ্রুপিং এখন দ্বন্দ্ব সংঘাতে রূপ নিয়েছে। কতিপয় ব্যক্তির সীমাহীন লোভ এবং নিলজ্জতা এখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজে আলো ছড়াতে বাতিঘর হিসেবে কাজ করবে যে প্রেসক্লাব সে আজ নিজেই ঘোর অন্ধকারে। এর জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে দায়ী করব না, এটা সম্ভবত ক্লাবের চেয়ার গুলোর দোষ, যেখানে কেউ একবার বসলে লোভ মোহ তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। এ অবস্থার অবসান কল্পে প্রকৃত সাংবাদিকদের সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এ বছরের নির্বাচনে আমি সহ-সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছিলাম। যে কমিটির নয়টি পদে ইতোমধ্যে সভাপতি হাবিবুর রহমান সহ ৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। শুধুমাত্র সহ-সভাপতি এবং সম্পাদক পদে আগামীকাল ৩১ ডিসেম্বর নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
তিনি বলেন, দুই বছরের মেয়াদ শেষ হলেই নির্বাচনের নামে প্রহসন করে সুকৌশলে কমিটির মেয়াদ নবায়ন করা হয় মাত্র! এ বছরও এর ব্যতিক্রম নয়, আমি অনাকাংখিত ভাবে প্রার্থী হওয়ায় তাদের সেই প্রক্রিয়াটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে ২৬ শে ডিসেম্বর বৈশাখী টেলিভিশনের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান পন্ড হয়েছে। সেদিন একটি পক্ষ ক্লাবে তালা মেরে রাখায় ভোলার সিনিয়র জুনিয়র সাংবাদিকরা প্রেসক্লাবে প্রবেশ করতে পারেনি। এমন অপ্রিতিকর পরিস্থিতিতে তাই আগামীকালকের নির্বাচন থেকে আমি সরে দাঁড়ালাম।
তিনি আরো বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই ক্লাবের সম্মানিত নবীন প্রবীণ সদস্যদের কে যারা আন্তরিক সমর্থন জানিয়ে আমাকে ভোট প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আপনাদের আমানত গ্রহণে আমার ব্যর্থতা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি। আমি স্বপ্ন দেখি ভোলা প্রেসক্লাব হবে সকল সাংবাদিকদের অবাধ, নিরাপদ, বিচরণ ভূমি, এখানে সবার প্রবেশ অধিকার থাকবে। শুধু সাংবাদিক নয়, শিক্ষাবিদ রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, তথা ভোলার মানুষের কল্যানে কাজকরা সুশীল সমাজের মিলনস্থল। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সংগ্রামে ভোলার সাংবাদিক, রাজনীতিবিদসহ সকল মহলের সহযোগীতা কামনা করছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
অপরদিকে ব্যর্থতার দায় নিয়ে ভোলা প্রেসক্লাব কমিটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন শিপু ও মনির। তারা বলেন, ভোলার মানুষের অধিকার আদায়ের একমাত্র বাতিঘর। ভোলাকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বন্ধ্যত্বের তকমা ঘোচানোর ফেরি আন্দোলনে সফল যোগাযোগ ব্যাবস্থা সর্বশেষ ঢাকা-ভোলা দীবা সার্ভিস গ্রীন লাইন সহ সফল যোগাযোগ ব্যাবস্থা চালু, গ্যাস আন্দোলন, নদী ভাঙ্গা প্রতিরোধ আন্দোলনে হরতাল কর্মসুচী মধ্যদিয়ে স্থায়ী ব্লক বাঁধ বাস্তবায়নের কর্যকরী ভূমিকাসহ সকল রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে অসহায়দের পাশে থেকে সকল সম্ভাবনা ও অসংগতিতে ভেসে চলা ভোলার মানুষের সকল প্রকৃতিক দুর্যোগে রাত জেগে পাশে থাকা সাংবাদিকরা আজ যখন সংকটে সামান্য একটি নির্বাচন নিয়ে সেই ছোটখাটো সংকটে আমরা কোন অভিবাবক পাইনি আমাদের এই সংকট নিরসনে এগিয়ে আসতে। বরং প্রত্যেকে প্রতেকের জায়গা থেকে তালি বাজিয়েছেন সংকট ঘনিভূত করতে। জননেতা তোফায়েল আহমেদ। যার উপর ভোলার রাজনৈতিক সামাজিক সকল সমস্যায় সবাই তাকিয়ে থাকে সমাধানের জন্য তিনিও করেননি এই সামান্য সমস্যা র সমাধানটুকু করে দিতে। বরং তার নাম ভাংঙ্গিয়ে বার বার সমস্যা আরো ঘনিভুত করার চেষ্টা করেছে কেউ কেউ। মামলা মোকদ্দমাসহ ভোলা প্রেসক্লাব যখন যেরবার তখন নিজাম উদ্দিন আহাম্মেদ এগিয়ে এসে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যায়ে ক্লাবের বিলাশ বহুল ভবন নির্মান করেছেন।কিন্তু ক্ষত সারাননি। তিনি করেছেন ক্যান্সার রোগিকে লিপিস্টিক লাগানোর কাজ। আর সিনিয়র সাংবাদিক এম এ তাহের, এম ফারুকুর রহমান ও মুহাম্মদ সওকাত হোসেন অতিমাত্রায় রাজনৈতিক ফোবিয়ায় দুরে দাড়িয়ে রয়েছেন। যদিও কয়েকবার চেষ্টা করেছেন তারা কিন্তু রাজনৈতিক শক্তির ভয়ে নিজেদের কে গুটিয়ে রেখেছেন আর ভোলার প্রশাসনতো এই সংকটে বরাবরই তালি বাজিয়ে আসছেন তাদের সুবিধায়। আমরা তাই আজ অসহায়ের মত দেখি মিঠু ভাই এর মত মানুষকে ক্লাবের সদস্যপদ থেকে বাদ দেয়া, এক ক্লাবে দুটি কমিটি ও ক্লাবে তালা মারার মত দৃশ্য। মনে করে ছিলাম কমিটিতে গিয়ে সকল সমস্যা সমাধানে সকলকে নিয়ে কাজ করতে পারবো। কিন্তু প্রত্যেকের ইগো সমস্যার জন্য কোন প্রকার সমাধানতো দুরের কথা ক্লাবের কোন সিদ্ধান্তও আমাদে জানিয়ে নেয়া হয়নি বিশেষ করে গঠনন্ত্র সংশোধন ও সদস্য নেয়া ও বাদ দেয়ারমত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধানেও আমাদের মতামততো দুরের কথা কোন প্রকার আবগতি না করিয়ে করা হয়েছে। তাই সকল প্রকার ব্যার্থতার দায় নিয়ে আমরা ভোলা প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটি ও সকল প্রকার কার্যক্রম থেকে মেজবাহ উদ্দিন শিপু ও মোঃ মনিরুল ইসলাম অব্যহতি নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন।
এছাড়াও প্রহসনের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন ভোলার সিনিয়র সাংবাদিক মোকাম্মেল হক মিলন। তিনি বলেন, সকলকে না নিয়ে এককভাবে নির্বাচন দেয়া হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই তিনি দল-মত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবী জানিয়েছেন।