আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রার্থীদের দৌড়ঝাপ

এইচ এম জাকির ||

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-১ আসনে দলীয় মনোনয় পেতে প্রার্থীদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে গেছে। দলের প্রতি নিজের ত্যাগ, শ্রম, জেল জুলুমসহ দলীয় কর্মকান্ডে নিজের ভূমিকা নিয়ে উপর মহলে তুলে ধরছে মনোনয়ন প্রত্যাশিরা। তবে কেন্দ্রের লোভিংয়ে অনেকাংশে এগিয়ে থাকার বিষয়ে কেন্দ্রীয় মাহাবুবুবুর রহমান হিরনের নামই এখন সর্বমহলে শোনা যাচ্ছে।

এদিকে ভোলা-১ আসনে আওয়ালীগের পক্ষ থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছেন তোফায়েল আহমেদ, মাহবুবুর রহমান হিরণ, ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা , হেমায়েত উদ্দিন। বিএনপি থেকে মনোনয় প্রত্যাশা করছেন , গোলাম নবী আলমগীর, গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও আসিফ আলতাফ। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় পাটির একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ব্যারিষ্টার আন্দালিব রহমান পার্থ।

তবে স্বাধীনতার পর থেকে ভোলার আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বর্ষার নেতা তোফায়েল আহমেদের নামটি এখন সর্ব মহলে স্বীকৃত। তিনি ভোলা সদর আসন থেকে পাঁচবার এবং ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসন থেকে দুইবারসহ মোট সাতবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি ভোলা সদর আসনে একক প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কিন্তু বর্তমানে তিনি শারীরিকভাবে অনেকটা অসুস্থ থাকায় এই সুযোগটিকে কাজে লাগাতেই মরিয়া হয়ে উঠেছেন অন্যান্য প্রার্থীরা। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়নের তালিকায় অনেকাংশেই এগিয়ে রয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি ভোলার ঐতিহ্যবাহী মিয়া পরিবারের কৃতিসন্তান আলহাজ মাহবুবুর রহমান হিরন। তিনি ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রতিটি দলীয় কর্মকাণ্ডে তার ভূমিকা প্রশংসিত বলে দাবি করছেন দলের রুট লেভেলের নেতাকর্মীরা। ছাত্র জীবনে তিনি রাজশাহী বিবিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী (জালাল-জাহাঙ্গীর) পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন। সে ভোলা জেলা আওয়ামী যুবলীগের আহবায়কের দায়িত্বে থাকাকালীন সুনামের সহিত পালন করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী (শেখ সেলিম -ইকবাল) পরিষদের অর্থ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী (নানক -আজম) পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী যুবলীগের (ওমর ফারুক- হারুন) পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবেও সুনামের সহিত দায়িত্ব পালনকালে যুব সমাজের মধ্যমনিতে পরিনত হন। সঙ্গত কারণেই ভোলাবাসী মনে প্রানে বিশ্বাস করেন, আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে এই নেতার হাতে দ্বীপ জেলা ভোলার ১৮ লক্ষ মানুষের স্বপ্ন পূরণ করতে আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোলা -১ আসনের দলীয় মনোনয়ন তুলে দিবেন। এ ব্যাপারে মাহবুবুর রহমান হিরন বলেন, বিগত দিনগুলোতে আমাদের জননেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে আমরা তার প্রতিটি হুকুম অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। বিগত দিনগুলোতে পরপর কয়েকবার মনোনয়ন বোর্ডের তালিকায় আমার নাম থাকলেও বিভিন্ন কারণেই জননেত্রী শেখ হাসিনা সামনের দিনগুলোর জন্য আমাকে আশ্বাস দিয়ে অন্য পদে অলংকৃত করে রেখেছেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই আমার নামটি চলে আসে বলেই আমি মনে করছি। পাশাপাশি ভোলার বর্তমান এমপি তোফায়েল আহমেদের শারীরিক যে কন্ডিশন, তাতে করে দলের স্বার্থেই তিনি আমাদেরকে এখন সুযোগ করে দেয়া উচিত বলে আমি মনে করছি।

অন্যদিকে বিগত সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রের দিকে। তারা বলছেন, দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত হচ্ছে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়া। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে দলের মনোনীত প্রার্থী হতে পারেন জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম নবী আলমগীর, জেলা বিএনপির, ভোলা-২ আসনের সাবেক সংসদ হাফেজ ইব্রাহিমের ভাই গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও থানা বিএনপির আহবায়ক আসিফ আলতাফ।

এ ছাড়া রাজনৈতীক ব্যাক্তিত্ব ভোলার উন্নয়নের অন্যতম রুপকার মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জুর বড় ছেলে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ভোলা -১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ তার দল থেকে সদর আসনে নির্বাচন করবেন বলেও দলটির নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।

রাক্ষসী মেঘনা আর প্রমত্তা তেঁতুলিয়া নদীবেষ্টিত উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ভোলা-১ (সদর) আসন। জাতীয় সংসদের ১১৫ নম্বর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৮৪ হাজার ৮১১। এর মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা এক লাখ ৯৭ হাজার ৪৮২, নারী ভোটারের সংখ্যা এক লাখ ৮৬ হাজার ৭২৮ জন।

বিগত নির্বাচন পর্যালোচনা করে জানা গেছে, এ আসনটি বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দখলে ছিলো। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে এ আসনটি ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। ১৯৭০ সালে প্রথম এম এল এ নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ। এরপর ১৯৭৩ সালে এ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে আসনটি চলে যায় বিএনপির দখলে। তখন পারিবারিক প্রভাবের কারণে সংসদ সদস্য হন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মরহুম মোশারেফ হোসেন শাজাহান। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে আসনটি চলে যায় জাতীয় পার্টির দখলে। তখন সংসদ সদস্য হন দলের প্রভাবশালী নেতা ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জু। ১৯৯১ সালে আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালের দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। তখন সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা তোফায়েল আহমেদ। ২০০১ সালে এ আসনে চারদলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হলেও তিনি বিজেপি চেয়ারম্যান পার্থর কাছে হেরে যান। এরপর থেকে ইউছুফ হোসেন হুমায়ুন ভোলায় যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। ওই নির্বাচনে ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসন থেকে সংসদ সদস্য হন তোফায়েল আহমেদ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোলা-১ আসন থেকে আবার সংসদ সদস্য হন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ভোলা-১ আসনের বর্তমান এমপি সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ অংশ নিবেন বলে জানায় দলের নেতাকর্মীরা।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দলের জেলা শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা, ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর স্নেহভাজন মাহাবুবুর রহমান হিরণ ও কেন্দ্রীয় ছাত্র লীগের সাবেক নেতা হেমায়েত উদ্দিনের নামও শোনা যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা বলছেন, তোফায়েল আহমেদ বাণিজ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার পর এলাকায় উন্নয়ন কাজ করেছেন। তোফায়েল আহমেদ নদীভাঙনের হাত থেকে ভোলাকে রক্ষায় কাজ করেছেন। পৌর এলাকায় আংশিক বাসাবাড়িতে গ্যাস সংযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণে কাজ করেছেন। ভোলার উন্নয়নে তার অবদান অপরিসীম। তবে বর্তমানে তিনি অনেকটা অসুস্থ থাকায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে নিয়ে অনেকাংশেই চিন্তিত রয়েছেন।

অপরদিকে ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মাহাবুবুর রহমান হিরণ রুপালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের পরিচালক থাকালীন ভোলায় দলীয় অর্ধশতাধিক মানুষের চাকরীর ব্যাবস্থা করেছিলো।এছাড়া ব্যাংকের কল্যাণ তহবলি থেকে ভোলা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি স্কুলের উন্নয়নের জন্য সর্বউচ্চ টাকা অনুদান প্রদান করাসহ ভোলা প্রেসক্লাব, ফজিলতুন নেসা মহিলা কলেজ ও আব্দুর রব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব করে দেন বিভিন্নভাবে মানুষকে সহযোগিতা করে গেছেন। এছাড়া তার নিজের অর্থায়নে ভোলায় প্রথম লাশবাহী একটি গাড়ির ব্যাবস্থা করে দিয়ে ভোলার মানুষের ব্যাপক সাধুবাদ পান তিনি।

সে কারণে দলের আগামী নির্বাচনেও ভোলা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন তিনি।
ভোলা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ইসলাম বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোলায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। তিনি বলেন, সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। অন্য সব শাখার কমিটিও গঠন-পুনর্গঠন করে দলকে শক্তিশালী করার কাজ চলছে।

ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ভোলা-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী।অন্যদিকে ভোলা জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব রাইসুল আলম জানান, আপাততঃ তত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তই আমাদের দলের। আর যদি আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয় তাহলে দলের মনোনীত প্রার্থী যাকে দেয়া হয় তার সাথেই আমরা কাজ কাজ করব ইনশাল্লাহ।

তবে, থানা বিএনপির আহবায়ক আসিফ আলতাফ বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, আগের নির্বাচনগুলো জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচন হয়েছে। আগামী নির্বাচনে একক নির্বাচন হবে, নাকি জোটভুক্ত নির্বাচন হবে সেটা নিয়েও আমরা সন্ধিহান। তবে জোটভুক্ত হলে কতজোট হবে তা এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তাই দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের যাওয়ার কোন সূযোগ নেই। দলের মনোনয়নের বিষয়েও চুড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত এখনো না হলেও আমরা সকলেই তাকিয়েছে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের দিকে। দল যাকে মনোনয়ন দিবে আমরা তার পক্ষেই নির্বাচন করবো।

তবে শেষ পযর্ন্ত দলীয় মনোনয়ন কে পাবে সেদিকেই তাকিয়ে আছেন আওয়ামীলীগ ও বিএনপিসহ সকল দলের নেতাকর্মীরা।